Friday, February 26, 2016

সারমর্ম

বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল আমাদের শিকড় গজিয়েছে। আমরা আর নড়তে চড়তে পারি না। যে মাটির টান ছিন্ন করে আমরা আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতাম, সেই মাটিই আজ আমাদের সব। থাকা খাওয়া সবই এই মাটিতেই। সময়ের সাথে আমাদের ভেঙে পড়া শিরদাঁড়া আবার শক্ত করেছে এই মাটিই। 

মাঝে মধ্যে এসে গাছপালা গুলো আমাদের পাশে এসে বসে, আমাদের নিয়ে খেলা করে, আমাদের গায়ে পাতা বোলায়। আমাদের হাতের আঙ্গুল, মাথার চুল, গায়ের চামড়া ছিঁড়ে নেয় না। আমাদের হাত পা গলা কেটে নিজেদের জন্য খাট পালঙ্ক বানায় না। তারা গল্প করে নিজেদের মধ্যে,আমরা শুনি। এখনও গাছেরা সালোকসংশ্লেষ করে আমাদের সময় মত খেতে দিয়ে যায়, আমরা তাই খাই। 
এখনও পাখিরা আকাশে ওড়ে, গাছের ডালে গিয়ে বসে, আমরা শুধু দেখি। আমাদের ভ্রুনপ্রতিস্থাপন করে আমাদের বংশবৃদ্ধি করে বাঁচিয়ে রেখেছে এই পাখিরাই। মাঝে মধ্যে এসে আমাদের গান শোনায়। কাকটাও এসে গলা খাখরে মজা করে যায়। 

এখন আর ছাগল, গরু গাছের পাতা খায় না। রোজ দেখি গাছপালা গুলো খাবার রান্না করে ছাগল গরুদের খেতে দেয়। ছাগল গরুগুলো রোজ এসে আমাদের দুধ দিয়ে যায় খেতে। আমরা লজ্জায় চাইতে পারি না, তবু দিয়ে যায়, না চাইতেই। আর যাওয়ার সময় মাথায় লেজ বুলিয়ে দিয়ে যায়। আমরা কিছু বলতে পারি না, শুধু দেখি, দেখেই যাই। এখন আমাদের প্রতিবেশী মানুষটা আমাদের ছাগল বা গরু বললে আমাদের খারাপ লাগে না, বেশ গর্ববোধ হয়। 

ভালই আছি আমরা। ভাল আছে সবাই। কারুর সাথে কারুর ঝগড়া নেই, কেউ কাউকে ভয় পায়না, কেউ কারুর প্রতি ক্ষোভ পুষে রাখে না। এখন আমাদের আর কোন কাজ নেই, কাউকে কিছু দেওয়ার নেই। সারাদিন শুধু ভাবি, আমাদের শিকড় গজানোর আগে কি এরকম একটা পরিবেশ সত্যিই সৃষ্টি হতে পারত না!

No comments:

Post a Comment